আপনি কি জানেন প্রতি সেকেন্ডেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছে কোন না কোন মানুষ - qurantime

‘আল্লাহ কোন মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না। তবে কারো প্রতি জুলুম হয়ে থাকলে সে কথা আলাদা। আল্লাহ শ্রবণকারী, বিজ্ঞ।’ 
(সূরা নিসা-১৪৮)

প্রতি সেকেন্ডেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছে কোন না কোন মানুষ!

1) আমরা প্রত্যেকেই মৃত্যুর লাইনে দাঁড়িয়ে নিজের সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা করছি!

2) আমাদের সামনের লাইন কতটা লম্বা, সামনের সারিতে কতজন অপেক্ষমাণ, সেটাও আমাদের জানা নাই!

3) ইচ্ছা করলেই আমরা কেউ লাইনের পিছনে গিয়ে দাঁড়াতে পারবো না!

4) লাইন ভেংগে পালাতেও পারবো না!

তাই যতক্ষন লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, আমি যেন.....

5) ঘুষ-দূর্নীতির টাকায় কেনা হারাম বাড়ির বিছানায় ঘুমন্ত অবস্থায় মারা না যাই!

6) গভীর রাতে ইন্টারনেটে বাজে ভিডিও দেখা অবস্থায় মারা না যাই!

7) বন্ধু-বান্ধবীর সাথে অশ্লীল চ্যাটিং করা অবস্থায় মারা না যাই!

8) জুলুম, হত্যা, নির্যাতন, লুন্ঠন, মানুষের হক নষ্ট করা অবস্থায় মারা না যাই!

9) মানুষের ঘৃণা, লাঞ্চনা, অভিশাপরত অবস্থায় মারা না যাই!

10) পরকালের প্রস্তুতিবিহীন অবস্থায় মারা না যাই!

11) ঈমানহারা, তওবাবিহীন অবস্থায় মারা না যাই!

এরকম ভয়ংকর দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু আমাদের নসিব যেন না হয়!!!!

সূরা বালাদ

এই সূরাটিতে প্রধানতঃ দু’টি বিষয় আলোচিত হয়েছে:-

এক- শপথ করে আল্লাহ বলছেন যে, মানুষকে অবশ্যই শ্রমনির্ভর প্রাণী হিসাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতএব তাকে কষ্ট করে জীবনের ঘাঁটিসমূহ অতিক্রম করতে হবে (১-১৬ আয়াত)।

দুই- কষ্টের ফলাফল হিসাবে হয় সে সৌভাগ্যবান হবে, নয় হতভাগ্য হবে (১৭-২০ আয়াত)।

(১) لَا أُقْسِمُ بِهَذَا الْبَلَدِ

লা য় উকসিমু বিহা-যাল্ বালাদি। 

আমি শপথ করছি এই নগরীর;

‘এই নগরী’ বলতে মক্কা নগরীকে বুঝানো হয়েছে। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন, ‘শপথ এই নিরাপদ নগরীর’ (তীন ৯৫/৩)। অন্যত্র এই শহরকে সরাসরি ‘মক্কা’ বলা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই প্রথম গৃহ যা মানবজাতির জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, তা হলো ঐ গৃহ যা মক্কায় অবস্থিত। যা বরকতময় ও বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শক’ (আল ইমরান ৩/৯৬)।

(২) وَأَنْتَ حِلٌّ بِهَذَا الْبَلَدِ

অআন্তা হিল্লুম্ বিহা-যাল্ বালাদি। 

এমতাবস্থায় যে আপনি এই নগরীতে অবস্থানকারী।

অর্থাৎ আমি এই মহান নগরীর শপথ করছি যার উচ্চমর্যাদা সম্পর্কে আপনি অবগত। সেই সাথে আপনি এখানকার বাসিন্দা হওয়ায় এর সম্মান আরও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে। পূর্ববর্তী আয়াতের শপথকে অত্র আয়াতের সাথে সংযুক্ত করার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উচ্চ মর্যাদাকে আরও উন্নত করা হয়েছে। যেন তাঁর জন্যই শপথ করা হয়েছে। এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, রাসূলই (সাঃ) এ নগরীতে বসবাসের সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি এবং তাঁর মাধ্যমেই এ নগরীর মর্যাদা পূর্ণতা পেয়েছে।

(৩) وَوَالِدٍ وَمَا وَلَدَ

অওয়া-লিদিঁও অমা-অলাদা।

শপথ জনকের ও যা সে জন্ম দেয়।

এখানে পিতা ও সন্তান বলতে আদম ও বনি আদমকে বুঝানো হতে পারে। যেমন প্রথমে সকল নগরীর উৎস বা উম্মুল ক্বোরা হিসাবে মক্কা নগরীর শপথ করা হয়েছে। তেমনি মানবজাতির উৎস বা আদি পিতা হিসাবে আদম (আঃ)-এর শপথ করা হয়েছে। অতঃপর বিগত ও অনাগত সকল আদম সন্তানের শপথ করা হয়েছে। অথবা সকল যুগের পিতা ও সন্তানদের শপথ করে বলা হচ্ছে।

(৪) لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي كَبَدٍ

লাক্বাদ্ খলাকনাল্ ইন্সা-না ফী কাবাদ্।

নিশ্চয় আমি মানুষকে শ্রমনির্ভররূপে সৃষ্টি করেছি।

মানুষ ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নানারূপ বিপদাপদ ও কায়-ক্লেশের মধ্য দিয়ে তাকে জীবন অতিবাহিত করতে হয়। যদিও দৈহিক কষ্ট-দুঃখ অন্য প্রাণীর জীবনেও হয়ে থাকে। তথাপি মানুষকে উপলব্ধি, চেতনাবোধ, জ্ঞান, বিবেকশক্তি ও দূরদৃষ্টি দান করা হয়েছে। মানুষকে তার সারা জীবনের কর্মের হিসাব ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকটে দিতে হয়। যা অন্য প্রাণীকে দিতে হয় না। মানুষের জন্য তার পার্থিব জীবনটা হলো পরীক্ষাগার। মানুষ দুনিয়াবী মুছীবত সহ্য করে এবং আখেরাতের কষ্ট সমূহের সম্মুখীন হয়। আনন্দে শুকরিয়া আদায় করা ও বিপদে ধৈর্য ধারণ করা- এ দু’টি পরীক্ষার কোন একটি থেকে সে কখনো মুক্ত থাকে না।

(৫) أَيَحْسَبُ أَنْ لَنْ يَقْدِرَ عَلَيْهِ أَحَدٌ

আ ইয়াহ্সাবু আল্লাইঁ ইয়াকদিরা ‘আলাইহি আহাদ্। 

সে কি মনে করে যে, তার উপর কেউ কখনো ক্ষমতাবান হবে না ?

শক্তিগর্বে স্ফীত অহংকারী মানুষকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ ধমকের সুরে কথাগুলি বলেছেন। যেমন বিগত যুগে ‘আদ জাতি বলেছিল, ‘কে আছে আমাদের চাইতে অধিক শক্তিশালী’? (হা-মীম সাজদাহ ৪১/১৫)। অর্থাৎ সে কি ভেবেছে তাকে দমন করার কেউ নেই? অথবা সেকি ভেবেছে ক্বিয়ামত হবে না এবং তার অত্যাচারের বদলা নেওয়া হবে না? এ আয়াতের বক্তব্য সকল যুগের সকল শক্তি মদমত্ত অহংকারী মানুষের জন্য প্রযোজ্য।

(৬) يَقُولُ أَهْلَكْتُ مَالًا لُبَدًا

ইয়াকু লু আহ্লাক্তু মা-লা ল্লুবাদা-। 

সে বলে, আমি প্রচুর ধন-সম্পদ ব্যয় করেছি।

ধনীদের মধ্যে যারা কৃপণ ও অহংকারী স্বভাবের, তারা যৎকিঞ্চিত খরচ করে বড়াই করে বলে যে, বহু ধন-সম্পদ ব্যয় করলাম। লোক দেখানো ও লোককে শুনানোর উদ্দেশ্যে ব্যয়কৃত এইসব দান আল্লাহর নিকটে গৃহীত হয় না। কেননা তারা আল্লাহর ওয়াস্তে দান করেনা। বরং দুনিয়াবী স্বার্থে দান করে।

(৭) أَيَحْسَبُ أَنْ لَمْ يَرَهُ أَحَدٌ

আইয়াহ্সাবু আল্লাম্ ইয়ারাহূ য় আহাদ্।

সে কি মনে করে যে, তাকে কেউ দেখেনি?

অর্থাৎ ধনশালী অহংকারী ব্যক্তিটি কত সম্পদ ব্যয় করেছে এবং কি উদ্দেশ্যে ব্যয় করেছে, সে কি ভেবেছে যে কেউ তা দেখেনি? অবশ্যই তা আল্লাহ দেখেছেন। তিনি তার ভিতর-বাহির সব খবরই জানেন এবং সবকিছুর হিসাব তিনি নেবেন।

(৮) أَلَمْ نَجْعَلْ لَهُ عَيْنَيْنِ

আলাম্ নাজ‘আল্ লাহূ ‘আইনাইনি। 

আমি কি তাকে দেইনি চক্ষুদ্বয়,

(৯) وَلِسَانًا وَشَفَتَيْنِ

অলিসা নাওঁ অশাফাতাইনি। 

জিহবা ও ওষ্ঠদ্বয় ?

আল্লাহ এখানে মানুষকে দেওয়া তিনটি অত্যন্ত মূল্যবান নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন- 

এক- ‘দু’টি চোখ’, যা দিয়ে সে দেখে ও সৌন্দর্য উপভোগ করে।

দুই- ‘জিহবা’, যার সাহায্যে সে কথা বলে, খাদ্যের স্বাদ আস্বাদন করে এবং দুই মাড়ির দাঁতের মাঝে খাদ্য ঠেলে দেয়।

তিন- ‘দু’টি ঠোট’, যা মানুষের মুখগহবরের দু’টি কপাট হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যদি ঠোট বা জিহবা ক্ষণিকের জন্য অসাড় হয়ে যায়, তাহলে সে বুঝতে পারে এ দু’টির মূল্য কত বেশী!

উক্ত নেয়ামতগুলি দেওয়ার উদ্দেশ্য এটা পরীক্ষা করা যে, বান্দা এগুলিকে কল্যাণের পথে ব্যয় করে, না অকল্যাণের পথে ব্যয় করে। সে এগুলিকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করে, না শয়তানের পথে পরিচালিত করে।

(১০) وَهَدَيْنَاهُ النَّجْدَيْنِ

অহাদাইনা-হু ন্নাজদাইন্। 

বস্তুতঃ আমি তাকে দু’টি পথ প্রদর্শন করেছি।

এখানে দু’টি পথ বলতে ভাল ও মন্দের দু’টি পথ বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ ভাল ও মন্দের দু’টি পথই বান্দার সামনে উন্মুক্ত থাকে। কোনটাই গোপন নয়। সে যেটা ইচ্ছা অবলম্বন করতে পারে। তবে দু’টি পথের মধ্যে উত্তমটি বেছে নেবার মত জ্ঞান-ক্ষমতা আল্লাহ মানুষের মধ্যে দিয়েছেন।

(১১) فَلَا اقْتَحَمَ الْعَقَبَةَ

ফালাক্ব্ তাহামাল্ আ’ক্ববাহ্। 

কিন্তু সে তো গিরিসংকটে প্রবেশ করেনি।

‘গিরিসংকটে প্রবেশ করা’ কথাটি প্রবাদ হিসাবে এসেছে। যার দ্বারা ‘মহৎ কর্ম’ বুঝানো হয়েছে। সৎকর্ম সম্পাদন করাকে উঁচু পাহাড়ী পথ অতিক্রম করা বা গিরিসংকটে প্রবেশ করার সাথে তুলনা করে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, নেক আমল করা কষ্টসাধ্য। নেক আমলের ফলাফল সর্বদা ঊর্ধ্বমুখী হয়। নেক আমল করতে গেলে নফসরূপী শয়তানের সঙ্গে রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়। উঁচু পাহাড়ী পথ অতিক্রম করতে গেলেও তেমনি কঠোর অভিযান করতে হয়। কিন্তু কাফের ও দুনিয়াপূজারী লোকেরা এটা করতে চায় না। সেকারণে আল্লাহ বলেন, ‘সে তো গিরিসংকটে প্রবেশ করেনি’।

(১২) وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْعَقَبَةُ

অমা য় আদ্র-কা মাল্ ‘আক্ববাহ্। 

আপনি জানেন, গিরিসংকট কি?

এর মাধ্যমে দ্বীনী আমলের উচ্চ মর্যাদা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‘গিরিসংকটে প্রবেশ করাটা কী?’ প্রশ্নের আকারে বলার উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর নিকট সৎকর্মের উচ্চ মর্যাদার বিষয়টি শ্রোতার হৃদয়ে প্রোথিত করে দেওয়া। অতঃপর উদাহরণ স্বরূপ এখানে পরপর তিনটি ঘাঁটি তথা মহৎ কর্মের কথা বলা হয়েছে, যা আল্লাহর নিকট খুবই মর্যাদাপূর্ণ। যেমন-

(১৩) فَكُّ رَقَبَةٍ

ফাক্কু রক্ববাতিন্। 

তা হচ্ছে দাসমুক্তি

আলোচ্য আয়াতে উদাহরণ স্বরূপ প্রথম ঘাঁটির কথা বলা হয়েছে, ‘দাসমুক্তি’। জাহেলী আরবে ও তৎকালীন বিশ্বে প্রায় সর্বত্র দাসপ্রথা চালু ছিল। ইসলাম এটাকে সেযুগে মানবতার বিরুদ্ধে এক নম্বরের অপরাধ বলে চিহ্নিত করেছে এবং দাস-দাসী মুক্ত করাকে সর্বাধিক পুণ্যের কাজ হিসাবে ঘোষণা করেছে। ফলে হযরত আবুবকর, হযরত ওছমান প্রমুখ সচ্ছল ছাহাবায়ে কেরাম কাফেরদের ঘরে নির্যাতিত বহু দাস-দাসীকে অর্থের বিনিময়ে খরিদ করে নিঃস্বার্থভাবে স্রেফ আল্লাহর ওয়াস্তে মুক্ত করে দেন। এটি যেহেতু অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও আয়াসসাধ্য নেক আমল, তাই এটাকেই পাহাড়ের প্রথম উঁচু ঘাঁটি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যার সোপান বেয়ে মুমিন নর-নারী জান্নাতে প্রবেশ করবে।

(১৪) أَوْ إِطْعَامٌ فِي يَوْمٍ ذِي مَسْغَبَةٍ

আও ইত‘আ-মুন্ ফী ইয়াওমিন্ যী মাস্গাবাতিঁই। 

অথবা ক্ষুধার দিনে অন্নদান করা।

জান্নাতে প্রবেশের জন্য দ্বিতীয় ঘাঁটি হলো ক্ষুধার্তকে অন্ন দান করা। বিশেষ করে যখন খাদ্য-শস্য দুষ্প্রাপ্য ও দুর্মূল্য হয় এবং দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।

(১৫) يَتِيمًا ذَا مَقْرَبَةٍ

ইয়াতীমান্ যা-মাকরবাতিন্। 

ইয়াতীম নিকটাত্মীয়কে।

ইয়াতীমকে অন্নদান করা ও তার প্রতিপালন করা অত্যন্ত ছওয়াবের কাজ। কিন্তু যখন সে ইয়াতীমটি অসহায় ও নিকটাত্মীয় হয় এবং সময়টি দুর্ভিক্ষের হয়, তখন তার ছওয়াব হয় বর্ণনাতীত।

(১৬) أَوْ مِسْكِينًا ذَا مَتْرَبَةٍ

আও মিস্কীনান্ যা-মাত্রবাহ্। 

অথবা ধুলি-ধুসরিত অভাবগ্রস্তকে।

অর্থাৎ সর্বস্বান্ত, ছিন্নমূল, মিসকিন, অভাবগ্রস্থ দিশেহারা ব্যক্তিকে অন্নদান করা হলো জান্নাতে প্রবেশের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি, যা উত্তরণ করা খাঁটি মুমিনের অবশ্য কর্তব্য।

(১৭) ثُمَّ كَانَ مِنَ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ وَتَوَاصَوْا بِالْمَرْحَمَةِ 

ছুম্মা কা-না মিনাল্লাযীনা আ-মানূ অতাওয়া ছোয়াও বিছ্ছোয়াব্রি অতাওয়া ছোয়াওবিল্ র্মাহামাহ্। 

অতঃপর তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া, যারা ঈমান আনে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় সবরের ও উপদেশ দেয় দয়ার।

অর্থাৎ দাসমুক্তির মাধ্যমে এবং দুর্ভিক্ষের সময় নিরন্নকে অন্নদানের মাধ্যমে কেউ ঘাঁটিতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না সে যথার্থ বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা যেকোন সৎকর্ম আল্লাহর নিকটে কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হলো আল্লাহর উপরে বিশ্বাস স্থাপন করা। ঈমানহীন আমল বা আমলহীন ঈমান কোনটাই কাজে আসবে না। বরং ঈমান ও আমল একত্রিত হওয়া আবশ্যক। ঈমানের পরে এখানে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ আমলের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথমটি হলো পরস্পরকে সবর ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়া।এবং দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সৎকর্মটি হলো পরস্পরকে দয়া ও অনুগ্রহের উপদেশ দান করা।

(১৮) أُوْلَئِكَ أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ

উলা-য়িকা আছ্হবুল্ মাইমানাহ্ ।

এরাই হলো ডান সারির মানুষ (সৌভাগ্যবান)।

অর্থাৎ উপরে বর্ণিত গুণাবলীসম্পন্ন মানুষ ক্বিয়ামতের দিন সৌভাগ্যশালীদের জন্য নির্ধারিত ডান সারিতে স্থান পাবে। ক্বিয়ামতের দিন মানুষকে তিন সারিতে ভাগ করা হবে। একটি হবে অগ্রগামী দল, একটি হবে দক্ষিণ বা ডান সারির দল এবং একটি হবে বাম সারির দল। প্রথম দু’টি দল জান্নাতী হবে এবং বাম সারির লোকেরা জাহান্নামী হবে (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৭-১২)। জান্নাতীদের ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে এবং তাদের সহজ হিসাব নেওয়া হবে (বনি ইস্রাঈল ১৭/৭১; ইনশিক্বা্ক্ব ৮৪/৭-৮)।

(১৯) وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِآيَاتِنَا هُمْ أَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ 

অল্লাযীনা কাফারূ বিআ-ইয়া-তিনা-হুম্ আছ্হা-বুল্ মাশ্য়ামাহ্। 

আর যারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করে তারাই হলো বাম সারির মানুষ (হতভাগা)।

পাপিষ্ঠ কাফের-ফাসেক-মুশরিক-মুনাফিকদের ক্বিয়ামতের দিন বাম সারিতে দাঁড় করানো হবে (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৯,৪১)। এদের পিঠের পিছন দিয়ে বাম হাতে আমলনামা দেয়া হবে (ইনশিক্বাক্ব ৮৪/১০)।

(২০) عَلَيْهِمْ نَارٌ مُّؤْصَدَةٌ

‘আলাইহিম না-রুম্ মুছোয়াদাহ্।

তারা অগ্নিপরিবেষ্টিত অবস্থায় বন্দী থাকবে।

অর্থাৎ আগুন তাদেরকে চারদিক থেকে বেষ্টন করবে। কোনদিক দিয়ে তারা পালাবার পথ পাবে না। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘প্রজ্বলিত অগ্নি তাদেরকে বেষ্টন করে রাখবে, উঁচু উঁচু স্তম্ভসমূহে’ (হুমাযাহ ১০৪/৮-৯)।

আল্লাহ গাফুরুর রাহীম স্বীয় অনুগ্রহে ও দয়ায় আমাদেরকে অগ্নিপরিবেষ্টিত জাহান্নামের শাস্তি থেকে হেফাজত করুন।

Credit: Dr. Tuhin Malik. উনার পেইজ লিঙ্ক > Dr. Tuhin Malik

Post a Comment

Previous Post Next Post