উমার ইবনু আব্দুল আযীয রহিমাহুল্লাহ সম্পর্কে তাঁর স্ত্রী ফাতিমাহ বিনতু আব্দুল মালিক বলেন,
''তাঁর চেয়ে অধিক সলাত ও সিয়াম পালনকারী এবং নিজ রবের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত কাউকেই আমি দেখিনি। ইশার সলাতের পর তিনি বসে বসে কাঁদতেন এবং তাঁর চক্ষুদ্বয় কান্নায় ভিজে আসতো। এরপর তিনি একটু থামতেন এবং আবার কাঁদতে থাকতেন। এভাবে আবারও তাঁর চক্ষুদ্বয় কান্নায় ভিজে আসতো।''
ফাতিমাহ আরো বলেন,
''যখন তিনি আমার পাশে বিছানায় শায়িত অবস্থায় থাকতেন, তখন তিনি আখিরাতের কোন বিষয় স্মরণ করতেন এবং চড়ুই যেমন পানিতে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে তেমনিভাবে গা ঝাড়া দিয়ে উঠতেন এবং উঠে বসে বসে কাঁদতেন। তাঁর এরূপ অস্থিরতা দেখে দয়াবশত আমি তাঁর শরীরে লেপ জড়িয়ে দিতাম।''
একবার তিনি তাঁর জনৈক সহচরকে বললেন,''আজকের রাত্রি আমি চিন্তাভাবনা করে বিনিদ্র অবস্থায় কাটিয়েছি।''
সে বলল, ''কীসের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করে কাটিয়েছেন হে আমীরুল মু'মিনীন!''
তিনি বললেন,
''কবর ও কবরবাসীর ব্যাপারে। যদি তুমি দাফনের তিন দিন পর কবরে মৃতের পরিণতি দেখতে, তাহলে তাঁর সাহচর্যে দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্ব থাকা সত্ত্বেও, তাঁর কাছে একা একা যেতে তুমি খুব ভয় পেতে।
সেখানে তুমি এমন এক গৃহ দেখতে পেতে যেখানে বিষাক্ত পোকামাকড় বিচরণ করছে এবং কীট-প্রত্যঙ্গ আসা-যাওয়া করছে। সেখানে পুঁজ প্রবাহিত হচ্ছে, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং পরিচ্ছন্ন, সুগন্ধিময় ও সুন্দর কাফনখানা নোংরা ও জরাজীর্ণ হয়ে আছে।''
এরপর তিনি একটি দীর্ঘশ্বাস টেনে নিয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলেন।
আলী ইবনু যাইদ বলেন,
''হাসান বাসরী ও উমার ইবনু আব্দুল আযীযের মত কাউকে আমি দেখিনি, তাদেরকে দেখলে মনে হতো জাহান্নামকে যেন শুধু তাদের দুজনের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে!''
তিনি যখন তাঁর বিছানায় যেতেন, তখন এই আয়াত পাঠ করতেন,
إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ
নিশ্চয়ই তোমাদের রব আল্লাহ, যিনি আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন।
[সূরাতুল আ'রাফঃ ৫৪]
আরো পড়তেন,
أَفَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَى أَنْ يَأْتِيَهُمْ بَأْسُنَا بَيَاتًا وَهُمْ نَائِمُونَ
তবে কি জনপদবাসীরা নিরাপত্তা পেয়ে গেছে যে, আমাদের শাস্তি তাদের উপর রাতে আক্রমণ করবে না, যখন তাঁরা ঘুমন্ত থাকবে?
[সূরাতুল আ'রাফঃ ৯৭]
এছাড়াও এ জাতীয় আরো একাধিক আয়াত তিনি পাঠ করতেন।
প্রতি রাতে তাঁর ফকীহ সাথীবর্গ তাঁর কাছে সমবেত হতেন এবং তাঁরা মৃত্যু ও আখিরাত ছাড়া ভিন্ন কোনো আলোচনায় লিপ্ত হতেন না। এরপর তাঁরা সকলে এমনভাবে কাঁদতেন যেন তাদের সম্মুখে কোনো জানাযা উপস্থিত।
মুকাতিল ইবনু হাইয়ান বলেন,
''একবার আমি উমার ইবনু আব্দুল আযীযের পিছনে সলাত পড়লাম। তখন তিনি এই আয়াত পাঠ করলেন,
وَقِفُوهُمْ إِنَّهُمْ مَسْئُولُونَ
আর তাদেরকে থামাও, তাদেরকে তো প্রশ্ন করা হবে।
[সূরাতুস সফফাতঃ ২৪]
এরপর তিনি বারবার তা পড়তে লাগলেন কিন্তু সেই আয়াত অতিক্রম করে আর অগ্রসর হতে পারলেন না।''
[আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (ফিক্র), ইবনু কাছীর, ৯/২০৪-২০৫]
হ্যাঁ, বিশাল মুসলিম সাম্রাজ্যের পঞ্চম খলীফা ও দ্বিতীয় উমার নামে খ্যাত এই মহান ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে এভাবেই কাঁদতেন।
আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
عَيْنَانِ لَا تَمَسُّهُمَا النَّارُ: عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ، وَعَيْنٌ بَاتَتْ تَحْرُسُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ
দুটি চোখ, যাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না;
(১) সেই চোখ, যা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে
(২) এবং সেই চোখ, যা আল্লাহর পথে পাহাড়ায় রাত্রিযাপন করে।
[আস-সুনান, তিরমিযী, ১৬৩৯; শারহুস সুন্নাহ, বাগাবী, ২৬২০; আলবানীর মতে সহীহ]
Tags:
ইসলাম এর কথা
